কোটা আন্দোলনের প্লাটফর্ম বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক রাশেদ খানকে আইসিটি আইনের মামলায় গ্রেফতারের পর সাধারণ শিক্ষার্থীদের শাহবাগে চলে আসার নির্দেশ দিয়েছেন সংগঠনের যুগ্ম আহ্বায়ক নূরুল হক নূর।
রোববার (০১ জুলাই) বিকালে রাজধানীর ল্যাবএইড হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে ফেসবুক লাইভের মাধ্যমে দেশের সকল শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে এ আহ্বান জানান তিনি।
এর আগে দুপুরে শাহবাগ থানায় তথ্যপ্রযুক্তি আইনে করা মামলায় মিরপুর-১৪ এর ভাষানটেক এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয় রাশেদ খানকে। পরে বিকালে হাসপাতালে বিছানায় শুয়েই ফেসবুক লাইভে কথা বলেন নূর।
এ সময় তিনি বলেন, ‘আমি হাসপাতাল থেকে নূরুল হক বলছি, আমরা আজকে মৃত্যু পথযাত্রী একেকজন। অনেকে আহত হয়েছে মারাত্বকভাবে, গতকালকে দেখেছেন ছাত্রলীগের গুন্ডারা আমাদের ওপর হামলা করেছে, তারা শুধু আমাদের ওপর নয়, দেশের বিভিন্ন জায়গায় হামলা করেছে। এবং আজকে আমার সহযোদ্ধা রাশেদসহ অনেককে পুলিশ গ্রেপ্তার করে নিয়ে গেছে।
তিনি বলেন, আপনারা আগেও দেখেছেন যে, ৬৩জনকে গ্রেপ্তার করেছে ছাত্রদের এই আন্দোলনকে বন্ধ করার জন্য। কিন্তু আপনারা বলেছেন যে, বাংলাদেশ ছাত্রসমাজ এক আছে, আপনাদের এই ভরসায় আমরা আন্দোলন করেছিলাম। তাই আমরা আপনাদেরকে ভাই হিসেবে নির্দেশ দিচ্ছি- আপনারা সবাই শাহবাগে চলে আসুন। শুধু শাহবাগ নয়, সারা বাংলাদেশে যে যেখানে আছেন সবাই আপনার ভাইদের মুক্তির দাবিতে এবং কোটা সংস্কারের প্রজ্ঞাপনের দাবিতে রাজপথে নামুন।
কোটা আন্দোলনের নেতা বলেন, আমি হাসপাতালে বেডে, যেকোনো সময় আমাকেও পুলিশ গ্রেপ্তার করতে পারে। কিন্তু আমরা গ্রেপ্তার কিংবা পুলিশকে ভয় পাইনা। আপনারা দেখেছেন কালকে যেভাবে আমাদের বেধম মারধর করেছে, তবু আল্লাহর অশেষ রহমতে এখনো বেঁচে আছি। আপনাদের সামনে কিছু বলতে পারছি।
এখন আপনাদেরকে একটা কথাই বলবো, আজকে রাশেদ-নূরের বিপদের দিনে যদি আপনারা না দাঁড়ান আর কোনো দিন বাংলার বুকে কেউ সাহস করে অধিকার আদায়ের আন্দোলন করবে না।’
সরকারি চাকরিতে কোটাপ্রথা বাতিলে সরকারি ঘোষণা বাস্তবায়ন না হওয়ায় (৩০ জুন) শনিবার বেলা ১১টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে সংবাদ সম্মেলন ডেকেছিল ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ
সংবাদ সম্মেলন শুরুর ঠিক আগমুহূর্তে কোটা আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা চালায় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এতে পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক নূরুল হক নূরসহ সাত শিক্ষার্থী আহত হন।
ওই সময় নূরকে আটকে রেখে উপর্যুপরি লাথি-ঘুষিসহ বেধড়ক মারধর করা হয়। বাঁচার জন্য নূর কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির পরিচালক এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে তথ্যবিজ্ঞান ও গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষক ড. জাভেদ আহমেদকে জড়িয়ে ধরেন। এরপরও হামলাকারীরা থামেনি। তারা নূরের পাশাপাশি শিক্ষক জাভেদকেও মারধর করতে থাকে। এতে তার হাতের একটি আঙুল কেটে যায়।
এই হামলার প্রতিবাদে রোববার থেকে দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে অনির্দিষ্টকালের ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন এবং অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করে ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ।
এদিকে আজ রবিবার সকাল সাড়ে ৯টায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) কোটা সংস্কার আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করেছেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। ছাত্রলীগের অতর্কিত এ হামলায় কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ছয়জন আহত হয়েছেন।
এর আগে শনিবার রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে কোটা সংস্কারের নামে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘বিশৃঙ্খলা’ সৃষ্টিকারীদের প্রতিহত করা হবে বলে ঘোষণা দেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।